অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম বলেছেন, সাবেক স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে 'চোর ব্যবস্থা' চাপিয়ে দিয়েছেন। তিনি শেখ হাসিনাকে 'স্বৈরাচারের জননী' বলেও অভিহিত করেছেন। শফিকুল আলম বলেন, শেখ হাসিনার দুর্নীতি নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।
মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে. এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব এ মন্তব্য করেন।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ২১ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আটটি প্রকল্পে দুর্নীতির তথ্য চেয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে চিঠিও পাঠিয়েছে দুদক।
শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, 'শেখ হাসিনাকে নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। আরো বিস্তারিত কাজ পরে দেখা হবে. অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য এটি একটি শীর্ষ অগ্রাধিকার। তিনি (শেখ হাসিনা) এখানে চোর ব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষ জানতে চায় এই চুরির শাসনামলে কারা তার সাথে বড় চুরির সাথে জড়িত ছিল। এ বিষয়ে জানানো সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। সে যে পরিমাণ চুরি করেছে তা অবশ্যই জানাতে হবে। সরকার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে।’
ব্যবসা সংক্রান্ত অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, গত ১৫ বছরে ‘স্বৈরাচারের জননী’ উন্নয়নের অনেক গল্প বলেছেন। কিন্তু গত ১৫ বছরে অর্থনীতির ভিত্তি ছিল সস্তা শ্রম। দেশে সস্তায় শ্রম বিক্রি হয়েছে, সস্তা শ্রম বিদেশে রপ্তানি হয়েছে। তবু উন্নয়নের অনেক বড় গল্প শোনা গেছে।
শেখ হাসিনাকে কবে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে এমন প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, সরকার এখান থেকে আইনি প্রক্রিয়া জোরদার করে চলছে। আইনের নিয়ম মানতে হলে আইনি প্রক্রিয়ায় সময় দিতে হবে। চাইলেও অনেক আইনি কাজ খুব দ্রুত করা যায় না। বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে যত দ্রুত সম্ভব, সরকার সে অনুযায়ী কাজ করছে।
সরকার বারবার বলেছে যে তারা শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চায় এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গতকাল এ বিষয়ে কথা বলেছেন এবং প্রেস সচিব বলেছেন যে তিনি আশা করেন যে শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ করা হবে, তা তাড়াতাড়ি হোক বা পরে। শেখ হাসিনা বিচারের মুখোমুখি হবেন।
প্রেস সচিব শফিকুল আলম অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনার অপরাধ ভয়াবহ। তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তা অকল্পনীয়। প্রায় সাড়ে তিন হাজার নিখোঁজ হয়েছে। হাজার হাজার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। জুলাই-আগস্ট মাসে প্রায় দেড় হাজার মানুষ মারা যায়। এরপর শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড, দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যুর পর বড় ধরনের গণহত্যা হয়। বিএনপির ৫০ থেকে ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে সহিংসতার মামলা হয়েছে, যার প্রায় সবই ভুয়া। মামলা করা মানে তাদের অধিকার কেড়ে নেওয়া। দেখা গেছে তাদের ছেলে মেয়েরা বিসিএস পরীক্ষা দিতে পারছে না। সে সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়াবহ ঘটনা ঘটে, যা মর্মান্তিক।